বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত হলো একটি অনন্য সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব। “প্রতিভা সন্ধানে” পত্রিকার উদ্যোগে কলকাতার শিয়ালদহ সংলগ্ন কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলে শনিবার, ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে এই মহতী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান, যেখানে অংশগ্রহণ করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ বহু গুণীজন।
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার প্রতীক এই দিনটি উপলক্ষে প্রকাশিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারি ভিত্তিক একটি বিশেষ স্মরণ সংখ্যা, যা বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য, ভাবনা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে। এ উপলক্ষে “স্মৃতি স্মারক সম্মাননা ২০২৫” প্রদান করা হয় বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সমাজসেবা ও গবেষণাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা প্রায় ৯০ জন বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, শিল্পী ও সমাজসেবীকে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কবি ও অধ্যাপক ড. শঙ্কর প্রসাদ নস্কর। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলা সাহিত্যের শিকড়, স্বকীয়তা এবং চিরন্তন শক্তির কথা তুলে ধরেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি ও সাহিত্যিক শ্রী পৃথ্বীরাজ সেন, যিনি বিশ্বমঞ্চে মাতৃভাষার পরিচিতি এবং বাংলা সাহিত্যের সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্বক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় মনোজ্ঞ উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে, যা পরিবেশন করেন সুরসন্ধানী শিল্পী সুমিত্রা সরকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিক শিল্পী ঈশিকা মন্ডল এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন শতাব্দী আচার্যসহ একাধিক গুণী শিল্পী। সাহিত্য, কবিতা, সংগীত ও চিন্তনচর্চার অপূর্ব মেলবন্ধনে ভরে ওঠে সমগ্র অনুষ্ঠান। এই মিলনমেলা হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যের শক্তি ও সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল প্রতিফলন।
সারা রাজ্য তথা দেশ-বিদেশের প্রায় দেড় শতাধিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সংস্কৃতিপ্রেমী এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে অনেকেই স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন, কেউবা নিজস্ব গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, কেউ সাহিত্যের ইতিহাস ও ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখযোগ্য “স্মৃতি স্মারক সম্মাননা ২০২৫” প্রাপকগণের মধ্যে রয়েছেন—শ্রী পৃথ্বীরাজ সেন, ড. শঙ্কর প্রসাদ নস্কর, ড. শেখ কামাল উদ্দিন, ড. নিরুপম আচার্য, শ্রী রত্নাংকুর মিত্র, ড. সুজাতা দে, ডা. রুহুল আমিন, শ্রী সান্টু গুপ্ত, শ্রী সমুদ্র বিশ্বাস, শ্রী শ্রীমন্ত কুমার মন্ডল, শ্রী ভোলানাথ হালদার, শ্রীমতী অরুণিমা চ্যাটার্জী, শ্রীমতী শশীবালা বর্মন অধিকারী, জনাব আব্দুল করিম, শ্রী পশুপতি বিশ্বাস, মানিক পন্ডিত, জুলফিকার আলী পিয়াদা, নায়েব আলী গায়েন, জ্যোতির্ময় সরদার, আনসার উল হক, সামসুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, গোপাল চন্দ্র গায়েন, সিরাজুল ইসলাম ঢালী ও শাহ আলম মন্ডল।
এছাড়াও সম্মানিত হন আরো প্রায় ৬৫ জন বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সমাজসেবী, যাঁরা তাঁদের নিরলস সাহিত্যচর্চা ও সামাজিক অবদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার গৌরবকে সমৃদ্ধ করেছেন। এই দীর্ঘ তালিকা “প্রতিভা সন্ধানে” পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় স্থান পেয়েছে।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন প্রাজ্ঞ কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শ্রী শ্রীমন্ত কুমার মন্ডল, যাঁর দক্ষ হাতে অনুষ্ঠানটি ছিল সাবলীল ও প্রাণবন্ত। গোটা আয়োজনের মূল পরিকল্পক ছিলেন “প্রতিভা সন্ধানে” পত্রিকার সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা, যাঁর সাহিত্যপ্রেম ও সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ছিল প্রতিটি পর্যায়ে।
অনুষ্ঠানের এক বিশেষ ঘোষণায় সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা জানান, “প্রতিভা সন্ধানে” পত্রিকার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আগামী ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে কলকাতার এক বৃহৎ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্ব সাহিত্য সম্মেলন ২০২৫। এই সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বের ১৫টি দেশ, ভারতের ২০টি রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলা থেকে আগত প্রায় ৫০০ কবি, সাহিত্যিক ও ৩০০ সাহিত্যপত্রিকার সম্পাদক। সম্মেলনের জন্য লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
এই সাহিত্যমেলা শুধু একটি অনুষ্ঠান ছিল না, এটি ছিল এক নবজাগরণ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতার নির্যাসে গঠিত এই মহাযজ্ঞ প্রমাণ করে দিল—বাংলা সাহিত্য আজও জীবন্ত, প্রাসঙ্গিক এবং শক্তিশালী। আগামী প্রজন্মের হাতে তা আরও দীপ্তভাবে এগিয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস করে “প্রতিভা সন্ধানে”।
