ভারতের ফ্যাশন জগতে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা
ফ্যাশন হল একটি চলমান প্রবাহ, যেখানে নতুন নতুন ডিজাইন ও ট্রেন্ড প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে কিছু ফ্যাশন অনুষঙ্গ ও সামগ্রী ভারতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনত এই পণ্যগুলো আমদানি, বিক্রি বা ব্যবহার করলে জরিমানা কিংবা কারাদণ্ডও হতে পারে। তাই যারা ফ্যাশন জগতে কাজ করেন বা নতুন ট্রেন্ড অনুসরণ করতে চান, তাদের জন্য জানা জরুরি— ভারতে কোন কোন ফ্যাশন সামগ্রী নিষিদ্ধ?
🛑 ভারতে নিষিদ্ধ ফ্যাশন পণ্য ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী
1️⃣ পশুর চামড়া ও পশুর উৎপন্ন সামগ্রী
ভারতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭২ অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট প্রাণীর চামড়া, পশম, দাঁত, হাড় বা অন্য কোনো অংশ থেকে তৈরি পোশাক বা আনুষঙ্গিক সামগ্রী নিষিদ্ধ।
🚫 যেসব ফ্যাশন সামগ্রী নিষিদ্ধ:
✔ বাঘ, চিতা, হাতি, হরিণ বা সাপের চামড়া থেকে তৈরি জুতা, ব্যাগ ও বেল্ট।
✔ আইভরি (হাতির দাঁত) দিয়ে তৈরি গয়না বা অলংকার।
✔ খরগোশের লোম বা সীলের চামড়া দিয়ে তৈরি কোট।
2️⃣ ইলেকট্রনিকভাবে আলোকিত বা LED পোশাক ও গ্যাজেট
ভারতের পরিবেশ সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, উচ্চমাত্রার আলো নির্গতকারী ফ্যাশন অনুষঙ্গ বা পোশাক কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবহার নিষিদ্ধ।
🚫 যা নিষিদ্ধ:
✔ LED জ্যাকেট বা পোশাক, যা বিমানবন্দরের নেভিগেশন ও ট্রাফিক সিগন্যালের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
✔ অতিরিক্ত উজ্জ্বল LED জুতা, যা সড়কে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
3️⃣ অত্যধিক প্রকাশ্য বা বিতর্কিত পোশাক
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে “অশ্লীলতা ও শালীনতার আইন” (Section 292 IPC) অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট পোশাক পরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হতে পারে।
🚫 যা নিষিদ্ধ হতে পারে:
✔ কিছু রাজ্যে পাবলিক প্লেসে অশ্লীল বা অত্যধিক খোলামেলা পোশাক।
✔ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন পোশাকের ডিজাইন।
4️⃣ নকল বা জাল ব্র্যান্ডের ফ্যাশন পণ্য
ভারতের “Trade Marks Act, 1999” অনুযায়ী, জাল বা নকল ব্র্যান্ডের পোশাক ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী বিক্রি, আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ।
🚫 যা নিষিদ্ধ:
✔ জাল বা নকল ব্র্যান্ডের হ্যান্ডব্যাগ, ঘড়ি, জুতা ও পোশাক।
✔ ভুয়া Gucci, Louis Vuitton, Nike বা Adidas-এর নাম ব্যবহার করে তৈরি ফ্যাশন পণ্য।
5️⃣ অত্যধিক লেজার ও রেডিয়েশনযুক্ত সানগ্লাস বা গ্যাজেট
ভারতের “Radiation Protection Rules” অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট লেজার বা অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহারকারী চশমা বা গ্যাজেট স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কারণে নিষিদ্ধ।
🚫 যা নিষিদ্ধ:
✔ কিছু উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার রশ্মি ব্যবহার করা সানগ্লাস বা কনট্যাক্ট লেন্স।
✔ UV বা ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করা এমন কোনো ফ্যাশন সামগ্রী, যা চোখের ক্ষতি করতে পারে।
6️⃣ বিষাক্ত বা ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত কসমেটিকস ও অ্যাকসেসরিজ
ভারতে “Drugs and Cosmetics Act, 1940” অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট প্রসাধনী ও ফ্যাশন উপকরণ বিষাক্ত উপাদান থাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
🚫 যা নিষিদ্ধ:
✔ লেডযুক্ত লিপস্টিক, ফাউন্ডেশন ও নেইল পলিশ।
✔ ফরমালডিহাইড, পারদ বা অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত স্কিন কেয়ার পণ্য।
✔ অবৈধ ইনজেকশনের মাধ্যমে ফর্সা হওয়ার কসমেটিকস।
⚠ নিষিদ্ধ ফ্যাশন পণ্য ব্যবহার করলে কী হবে?
ভারতে নিষিদ্ধ ফ্যাশন সামগ্রী ব্যবহার বা বিক্রির ফলে জরিমানা, পণ্য বাজেয়াপ্ত বা কারাদণ্ডের শাস্তি হতে পারে।
🔹 জরিমানা: ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
🔹 কারাদণ্ড: কিছু ক্ষেত্রে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
🔹 পণ্য বাজেয়াপ্ত: অবৈধ ফ্যাশন পণ্য ধরা পড়লে তা সরকার বাজেয়াপ্ত করতে পারে।
🔮 ভবিষ্যতে ভারতের ফ্যাশন শিল্পের পরিবর্তন
ভারত এখন ইকো-ফ্রেন্ডলি ও নৈতিক ফ্যাশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন আইন আসতে পারে, যা পরিবেশবান্ধব ফ্যাশনকে উৎসাহিত করবে এবং ক্ষতিকর বা নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দেবে।
