ভারতে নিষিদ্ধ কিছু বিতর্কিত বই ও সিনেমা: কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল?
ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তবে বিভিন্ন সময় বই ও সিনেমা রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক কিংবা নৈতিক কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিছু বই ও চলচ্চিত্র সরকারি নির্দেশে নিষিদ্ধ, আবার কিছু ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা, জনসাধারণের আপত্তি বা সেন্সর বোর্ডের বিধিনিষেধের কারণে এগুলো মুক্তি পেতে পারেনি। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের ইতিহাসে বিতর্কিত ও নিষিদ্ধ বই এবং সিনেমাগুলোর তালিকা এবং কেন সেগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিল।
📚 ভারতে নিষিদ্ধ কিছু বিতর্কিত বই
1️⃣ The Satanic Verses – Salman Rushdie (1988)
🔹 বিখ্যাত ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদি-এর লেখা এই বইটি প্রকাশের পরই বিশ্বজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে।
🔹 ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে ভারত ১৯৮৮ সালে প্রথম দেশ হিসেবে এই বইটি নিষিদ্ধ করে।
🔹 পরবর্তীতে ইরান ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও বইটি নিষিদ্ধ হয়।
2️⃣ The Polyester Prince – Hamish McDonald (1998)
🔹 এটি ভারতীয় শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানির জীবনীভিত্তিক একটি বই।
🔹 আম্বানি পরিবারের আইনি পদক্ষেপের কারণে ভারতে বইটির প্রকাশ বন্ধ করা হয়।
🔹 পরবর্তীতে এটি “Ambani & Sons” নামে পুনরায় প্রকাশ করা হয়, তবে তাতেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
3️⃣ Jinnah: India-Partition-Independence – Jaswant Singh (2009)
🔹 এই বইয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভূমিকার একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা হয়েছে।
🔹 বইটিতে জওহরলাল নেহেরু ও সরদার প্যাটেলের কিছু নীতির সমালোচনা করা হয়, যা বিতর্কের সৃষ্টি করে।
🔹 বিজেপির প্রবীণ নেতা জস্বন্ত সিং নিজেও এই বইয়ের কারণে বিতর্কের মুখে পড়েন এবং তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
4️⃣ Rangila Rasul – Pandit Chamupati (1924)
🔹 ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কেন্দ্র করে লেখা একটি বই।
🔹 ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে এই বইটি ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়।
🔹 এটি ব্রিটিশ আমলেই নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনও নিষিদ্ধ রয়েছে।
🎬 ভারতে নিষিদ্ধ কিছু বিতর্কিত সিনেমা
1️⃣ Bandit Queen (1994)
🔹 এটি ফুলন দেবীর জীবনীভিত্তিক সিনেমা, যেখানে তার ওপর হওয়া নির্মম নির্যাতন ও প্রতিশোধ নেওয়ার কাহিনী দেখানো হয়েছে।
🔹 ছবিতে অত্যন্ত খোলামেলা দৃশ্য ও সহিংসতার কারণে ভারতীয় সেন্সর বোর্ড প্রথমে এটি নিষিদ্ধ করে।
🔹 তবে পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে এটি মুক্তি পায়।
2️⃣ India’s Daughter (2015)
🔹 এটি ২০১২ সালের দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি।
🔹 ভারত সরকারের নির্দেশে এটি ইউটিউব ও টেলিভিশনে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়।
🔹 কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে এটি অপরাধীদের পক্ষে সহানুভূতি তৈরি করতে পারে এবং দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
3️⃣ Paanch (2001)
🔹 পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের প্রথম ছবি, যা একটি গ্যাংস্টার গ্রুপের গল্প তুলে ধরে।
🔹 ছবিতে মাদক, সহিংসতা ও খোলামেলা দৃশ্যের কারণে সেন্সর বোর্ড এটি নিষিদ্ধ করে।
🔹 পরবর্তীতে কিছু দৃশ্য কেটে সিনেমাটি সীমিত পরিসরে মুক্তি দেওয়া হয়।
4️⃣ Water (2005)
🔹 এটি ভারতের বিধবা নারীদের জীবন নিয়ে নির্মিত একটি সিনেমা, যা গভীর সামাজিক ইস্যু তুলে ধরেছে।
🔹 ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে চলচ্চিত্রটির শুটিং বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ভারতে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
🔹 পরবর্তীতে বিদেশে সিনেমাটি মুক্তি পায় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।
❓ কেন ভারতে বই ও সিনেমা নিষিদ্ধ করা হয়?
ভারতে কোনো বই বা সিনেমা সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে নিষিদ্ধ করা হতে পারে:
🔹 ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত – কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী মনে করলে এটি তাদের বিরুদ্ধে।
🔹 রাজনৈতিক বিতর্ক – কোনো রাজনৈতিক নেতা বা পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে।
🔹 সামাজিক ও নৈতিকতা সংক্রান্ত সমস্যা – অতিরিক্ত সহিংসতা, নগ্নতা বা অশ্লীলতা।
🔹 আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে – কোনো সিনেমা বা বই দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
🔮 ভবিষ্যতে ভারতের সেন্সরশিপ নীতি কোথায় যাচ্ছে?
বর্তমানে ভারতে OTT প্ল্যাটফর্মের কারণে সেন্সরশিপ নীতি কিছুটা শিথিল হয়েছে। তবে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে সেন্সরশিপের মাত্রা এখনো অনেক বেশি।
📌 আপনার মতামত কী? ভারতে বই ও সিনেমার উপর সেন্সরশিপ প্রয়োজনীয়, নাকি এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?
