অর্থনীতির ক্লাসে প্রবীণ এক শিক্ষক ক্লাসে ঢুকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন—“বল তো, অভাব কাকে বলে?”
সামনের সারিতে বসে থাকা এক ছাত্র উঠে দাঁড়িয়ে বইয়ের ভাষায় উত্তর দিল,
“অর্থনীতিতে বস্তুগত বা অবস্তুগত কোনো দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে অভাব বলে।”
স্যার বললেন, “এটা তো বইয়ের ভাষা, বাস্তব জীবনে ‘অভাব’ বলতে তুমি কী বোঝ?”
ছাত্রটি চুপ। মাথা নিচু করে বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছে। ক্লাস নিস্তব্ধ।
স্যার আবার বললেন, “বল।”
ছাত্রটি এবার আস্তে আস্তে বলতে শুরু করল—
১. আমি যখন কলেজে আসি, মা ভাড়ার টাকা দিতে গিয়ে তার ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোনো রকমে ২০/৩০ টাকা বের করেন।
আমি তখন ৫ মিনিট পরই বাড়ি ফিরে গিয়ে মাকে বলি—“মা, আজ ক্লাস হবে না।”
মায়ের মুখে কষ্ট লুকানোর চেষ্টা—এইটুকুই আমার কাছে ‘অভাব’।
২. বাবা রাত করে বাড়ি ফেরেন। মা জিজ্ঞেস করেন, “এত দেরি হলো কেন?”
বাবা বলেন, “ওভারটাইম ছিল।”
বাবার এই ক্লান্ত মুখ, এই বাড়তি পরিশ্রমই আমার কাছে ‘অভাব’।
৩. ছোট বোন মাস শেষে প্রাইভেট টিচারের ফি চাইতে বাবার সামনে সংকোচে পড়ে যায়—সেই লজ্জাই ‘অভাব’।
৪. মা যখন ছেঁড়া কাপড় নিজ হাতে সেলাই করে বলেন, “এইটা তো ভালোই আছে, আরও কিছুদিন পরা যাবে”—এটাই ‘অভাব’।
৫. মাস শেষে টিউশনির টাকা মায়ের হাতে দিয়ে বলি, “মা, এটা দিয়ে সংসারের খরচ চালাও।”
মায়ের মুখে তখন একটুকরো স্বস্তির হাসি ফোটে—এই হাসিটুকুই আমার কাছে ‘অভাব’।
৬. বন্ধুদের দামী ফোনের ভিড়ে নিজের সাধারণ ফোনটা পকেটে লুকিয়ে রাখি—এই সংকোচটাই ‘অভাব’।
৭. অভাবের কারণে কাছের মানুষগুলো আস্তে আস্তে দূরে সরে যায়। সেই দূরত্বই আমার কাছে ‘অভাব’।
এই কথাগুলো শুনে পুরো ক্লাস দাঁড়িয়ে গেল। অনেকের চোখে জল। স্যারের চোখেও।
তিনি ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
এই ছেলেটি কোনো গল্পের চরিত্র নয়। এই ছেলে আমাদের আশপাশেই আছে।
যারা টাকার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করে, হাসিমুখে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করে, আর আমাদের সামনে সবকিছু আড়াল করে থাকে।
এই হাসিমুখের পেছনের কষ্টগুলো আমাদের চোখে পড়ে না।
এটাই বাস্তব। এটাই ‘অভাব’।
