ভূমিকা:
‘প্রস্টিটিউশন’ শব্দটি শুনলেই সমাজে অনেকের চোখে ভেসে ওঠে এক নারীর ছবি—যিনি অর্থের বিনিময়ে তার দেহ বিক্রি করেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দেহ ছাড়াও কি মানুষ নিজের আরও কিছু ‘বিক্রি’ করে না? এই শব্দের বাস্তবতা কি কেবল যৌনপেশার সীমানায় সীমাবদ্ধ, নাকি এটা এক বৃহৎ সামাজিক মানসিকতার প্রতিচ্ছবি?
নৈতিকতার ব্যবসা: কারা আসলে বিক্রেতা?
একজন নারী অর্থের বিনিময়ে দেহ বিক্রি করলে সমাজ তাকে “প্রস্টিটিউট” নামে আখ্যা দেয়। কিন্তু একজন কর্মকর্তা যখন ঘুষ নিয়ে বেআইনি কাগজে সই করেন, তখন কি তিনি নিজের বিবেক বিক্রি করছেন না? একজন রাজনীতিক যখন জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের বা দলের স্বার্থ রক্ষা করেন, তখন সেটা কি এক ধরনের বিক্রয় নয়?
এই প্রক্রিয়ায় কেউ দেহ নয়, বরং বিক্রি করে নিজের নৈতিকতা, আদর্শ এবং দায়িত্ববোধ। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে—কে বেশি দোষী? সেই নারী, যার হাতে কিছু নেই? নাকি সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি, যার আছে সব, কিন্তু তবু সে নিজেকে বেচে দেয়?
ক্ষমতা ও সম্পর্কের বাজার: দাম কত কার?
আমাদের সমাজে ক্ষমতার বিনিময়ে সিদ্ধান্ত কেনাবেচার সংস্কৃতি আজ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। চাকরি, পদোন্নতি, বিচার—সব কিছুতেই কোথাও না কোথাও বিক্রয় চলছে। এক শ্রেণির মানুষ আবার সম্পর্ককে বানিয়ে ফেলছে একধরনের বাণিজ্য, যেখানে লাভ-ক্ষতি হিসাব করে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়।
এইসব ক্ষেত্রেও তো এক ধরনের ‘প্রস্টিটিউশন’ই ঘটে। তবে তা শরীর নয়, বরং মানসিকতা ও আত্মার।
নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি: কে দায়ী?
সবচেয়ে করুণ বাস্তবতা হলো—যে নারী দেহ বিক্রি করেন, তাকেই সমাজ ঘৃণার চোখে দেখে। অথচ তার ক্রেতাকে নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। প্রশ্ন হলো—যদি বিক্রি করা অন্যায় হয়, তাহলে কেন ক্রেতার অপরাধ কম?
এই দ্বিচারিতা আমাদের সমাজের অন্তর্নিহিত বৈষম্যকে নগ্ন করে দেয়। একজন নারী যখন জীবনের লড়াইয়ে বাধ্য হয়ে শরীরকে পণ্য করে তোলে, তখন তাকে ঘৃণা করা যতটা সহজ, তার পরিস্থিতি বুঝে সহানুভূতি দেখানো ততটাই কঠিন।
উপসংহার: এক শব্দ, অনেক মানে
‘প্রস্টিটিউশন’ শব্দটা আসলে কেবল যৌনপেশার প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি একটি মানসিকতা, যেখানে টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে যায় বিবেক, আদর্শ, দায়িত্ববোধ ও সম্পর্ক।
এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় করা নয়। বরং আমরা যেন আরও গভীরভাবে ভাবি—কে আসলে ‘প্রস্টিটিউট’? কেবল সেই নারী, নাকি আমরা নিজেরাও কখনো কখনো, কোনও না কোনও ভাবে, বিক্রির পাত্র হয়ে উঠি?
সত্যিকারের পরিবর্তন তখনই আসবে, যখন সমাজ শুধুমাত্র বাইরের দোষ নয়, নিজের ভেতরের বিকৃতিকে চিহ্নিত করতে শিখবে।
