একজন ছেলে যখন বেকার থাকে, তখন সে শুধু অর্থনৈতিক সংকটেই পড়ে না, ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে নিজের অস্তিত্ব। সমাজের চোখে সে অদৃশ্য হয়ে যায়, তার কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে তুচ্ছতা আর অপারগতায়। এই পৃথিবীতে একজন বেকার যুবক যেন এক বোঝা, যার উপস্থিতি কেবল সহ্য করা হয়, গ্রহণ নয়।
প্রতিদিন সকাল তার কাছে নতুন কোনো সম্ভাবনা নিয়ে আসে না—আসে শুধু আরেকটি লজ্জার দিন। ঘুম থেকে উঠে মনে হয়, আজও কিছু বদলাবে না। হতাশা ছাপিয়ে সে বের হয় কাজ খুঁজতে, হাতে নিয়ে স্বপ্ন আর মনের ভেতরে হাজারো প্রশ্ন। কিন্তু বাস্তবতা বারবার ঠেলে দেয় ব্যর্থতার কূপে। একটার পর একটা দরজা বন্ধ হয়ে যায় চোখের সামনে। শুনতে হয় চেনা সেই কথা—”তোমার অভিজ্ঞতা নেই”, “আমরা কাউকে নিচ্ছি না”, কিংবা “তুমি উপযুক্ত না।”
এই শব্দগুলো শুধু তার কানেই বাজে না, ভেতরটাকেও জর্জরিত করে। বাড়ি ফিরলে মা মুখ নিচু করে বসে থাকেন, বাবা হয়তো খবরের কাগজের আড়ালে নিজের হতাশা লুকান। ছোট ভাইবোনের চোখেও ভেসে ওঠে অব্যক্ত প্রশ্ন—”তুমি কিছুই পারলে না?” এই দৃষ্টিগুলো তার আত্মবিশ্বাস ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
আর ভালোবাসার মানুষ? ধীরে ধীরে সে-ও দূরে সরে যায়। এই সমাজে ভালোবাসাও যেন কেবল সামর্থ্যবানদের জন্য সংরক্ষিত। প্রেম এখানে অর্থের কাছে মাথা নত করে।
বন্ধুরা ঠাট্টা করে, আত্মীয়রা তিরস্কার করে, প্রতিবেশীরা আড়ালে হাসে। এই চাপাতলের মধ্যে একজন যুবক এক সময় নিজেকেই ঘৃণা করতে শেখে। একসময় আর কোনো স্বপ্ন দেখে না, কারণ সে জানে—স্বপ্ন দেখা শুধু টাকাওয়ালাদের কাজ।
এই পৃথিবী শুধু সফলতার গল্প শুনতে চায়। কেউ আপনার চেষ্টা বা কষ্টকে মূল্যায়ন করে না, যদি তাতে টাকা না থাকে। সমাজ আপনাকে তখনই গ্রহণ করে, যখন আপনি কিছু “হয়ে ওঠেন”।
এই বাস্তবতায় কেউ কেউ বেঁচে থাকেন নীরবে, কেউ হারিয়ে যান একান্ত অন্ধকারে। একজন বেকার যুবক কেবল চাকরি খোঁজেন না—সে খোঁজেন সমাজে নিজের অস্তিত্বটুকু। আর এই অস্তিত্বের যুদ্ধটাই সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে নিঃসঙ্গ।
