ভিউসের লড়াইয়ে আজ হেরে যাচ্ছে ক্রিয়েটিভিটি। এখন আর ভিডিও বানানোর উদ্দেশ্য মননশীলতা নয়, বরং শরীর প্রদর্শন আর চমকপ্রদ ক্যাপশনই যেন ভাইরাল হবার একমাত্র রাস্তা। একজন মহিলা টাওয়েল পরে একটু ঘুরে দাঁড়ালেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউস, হাজার হাজার লাইক! অথচ কেউ যদি সমাজ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চায় বা সাহিত্যের চর্চা করে, সেই কনটেন্ট হয় ৫০০ ভিউতেও থমকে যায়।
আজকের ফেসবুক যেন এক ভিন্ন মাত্রার নাট্যমঞ্চ। কেউ সকালবেলা আলু-টমেটো খাচ্ছেন, আর ক্যাপশনে লিখছেন—“দেওর কে আজ যা দিলাম!” ব্যস, লাখ লাখ মানুষ ভিডিও দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দেওরকে কী দিল, সেটা জানার আগ্রহেই যেন মানুষ তীব্রভাবে আকৃষ্ট।
ধর্ম বা সাহিত্যের প্রসঙ্গে পোস্ট করলে—ধরা যাক “জয় গোঁসাই” নিয়ে কেউ কিছু বললেন—সেই পোস্ট হয় স্কিপ, নয়তো নাক সিঁটকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। আজকের পাবলিক শুধু চায় “বউদির নাইটি”-র গভীরতা। এর কারণেই ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে শাড়ি, নাইটি, শায়া পরে নেমে পড়ছে রিলস জগতে। কারও বুকের খাঁজ, কারও শরীরের উন্মোচন—এই হল জনপ্রিয়তার সংজ্ঞা।
মাঝবয়সী মহিলারা কবিতার ছলে বলেন—“জানেন, প্রেম করলে কত দুঃখ পেতে হয়?” কিন্তু এখানে কেউ কবিতা শুনতে আসে না, তারা দেখতে চায় “ম্যাজিক বডি”! তাই কবিতার আসল গুণ নয়, বুকের খাঁজ দেখিয়েই বাড়ছে ভিউস।
“দেখুন তো আমি কী পরে আছি?”—এই প্রশ্নেই এখন মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছেন অনেকে। ভিডিওতে স্ত… ঢেকে সেই প্রশ্ন করার পরেই কমেন্টে উৎসাহের ঝড়, আর সেই উন্মাদনায় উড়ে আসছে মনিটাইজড আয়।
কমেডি ভিডিও? এখন আর পাঞ্চলাইন নয়, কুৎসিত গালি দিয়ে হাসানোই ট্রেন্ড। কে কত সুন্দরভাবে খিস্তি দিতে পারে—তাতেই নির্ধারিত হচ্ছে জনপ্রিয়তা। হাহা রিয়্যাকশন আর লাইক-কমেন্টের বন্যায় হারিয়ে যাচ্ছে ভাষা, সভ্যতা, রুচি।
এই কি সমাজ? এই কি সেই সামাজিক মাধ্যম, যার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার আলো ছড়াব বলে ভেবেছিলাম? এখন তো মনে হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হয়তো একদিন শেখাতে হবে—পড়াশোনা করে লাভ নেই, ফেসবুক খুলে খাঁজ দেখো আর খাঁজ দেখাও, তাতেই কিনে ফেলতে পারো বাড়ি-গাড়ি!
এখন সময় এসেছে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর। আমরা ঠিক কোন দিকে যাচ্ছি? আমাদের সন্তানেরা কী দেখছে, কী শিখছে? কী দিচ্ছি আমরা তাদের?
নিজের রুচি বদলান। যদি না বদলান, তাহলে ভবিষ্যতের প্রজন্ম আর কিছু শেখারই সুযোগ পাবে না—সেখানে শুধু থাকবে শিরোনাম, নাইটি আর মনিটাইজড বিভাজিকা!
